উদ্ভিদের সংবেদনশীলতা এবং সাড়া প্রদান
Sensitivity and Response in Plants
জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়
Control and Coordination in Living Organisms
Movement of Plants
উদ্ভিদের চলন
প্রশ্ন: সংবেদনশীলতা কাকে বলে?
উত্তর: উদ্দীপকের প্রভাবে জীবদেহের সারা দেওয়ার ক্ষমতাকে সংবেদনশীলতা বলে।
প্রশ্ন: উদ্দীপক বলতে কি বোঝ?
উত্তর: বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ যে সকল শক্তি জীবদেহের সারা প্রদানে সহায়তা করে তাদের উদ্দীপক বলে।
বাহ্যিক উদ্দীপক: তাপ, আলো, বাতাস প্রভৃতি হল বাহ্যিক উদ্দীপক
অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক: বিভিন্ন প্রকার হরমোন হল অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক
প্রশ্ন: চলন(Movement) কাকে বলে?
উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় জীব একটি নির্দিষ্ট স্থানে স্থির থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বা উদ্দীপকের প্রভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালন করতে পারে তাকে চলন(Movement) বলে।
প্রশ্ন: গমন(Locomotion) বলতে কি বোঝ?
উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় জীব স্বেচ্ছায় বা উদ্দীপকের প্রভাবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে স্থান পরিবর্তন করে তাকে গমন (Locomotion) বলে
প্রশ্ন: চলন ও গমনের পার্থক্য লিখ।
উত্তর: চলন ও গমনের পার্থক্য -
চলন | গমন |
---|---|
1. চলনে জীবদেহের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয় না। | 1. গমনে জীবদেহের সামগ্রিক স্থান পরিবর্তন হয়। |
2. জীবের চলন এক জায়গায় স্থির থেকে সম্ভব। | 2. জীবের গমন এক জায়গায় স্থির থেকে সম্ভব নয়। |
3. গমন ব্যতীত চলন সম্ভব। অর্থাৎ চলন হলে গমন নাও হতে পারে। | 3. চলন ব্যতীত গমন সম্ভব নয়। অর্থাৎ গমন হলে চলন হতেই হবে। |
4. সাধারণত উদ্ভিদের ক্ষেত্রে চলন পরিলক্ষিত হয়। ব্যতিক্রম: ক্ল্যামাইডোমোনাস, ভলভক্স প্রভৃতি | 4. সাধারণত প্রাণীদের ক্ষেত্রে গমন পরিলক্ষিত হয়। ব্যতিক্রম: স্পঞ্জ, সাগরকুসুম প্রভৃতি |
প্রশ্ন: উদ্ভিদের চলন কত প্রকার ও কি কি?
উত্তর: উদ্ভিদ দেহে প্রধানত তিন প্রকারের চলন পরিলক্ষিত হয়। যথা:
1. ট্যাকটিক বা আবিষ্ট চলন (Tactic Movement)
2. ট্রপিক বা দিগনির্ণীত চলন (Tropic Movement)
3. ন্যাস্টিক বা ব্যাপ্তি চলন (Nastic Movement)
প্রশ্ন: ট্যাকটিক চলন বা আবিষ্ট চলন (Tactic Movement) কাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি? প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দাও।
উত্তর: আলো, উষ্ণতা, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি বহিঃস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সম্পূর্ণ উদ্ভিদের অথবা উদ্ভিদ অঙ্গের চলনকে ট্যাকটিক চলন বা আবিষ্ট চলন (Tactic Movement) বলে।
ট্যাকটিক চলন চার প্রকার। যথা:
1. ফটোট্যাকটিক চলন (Phototactic Movement)
2. থার্মোট্যাকটিক চলন (Thermotactic Movement)
3. কেমোট্যাকটিক চলন (Chemotactic Movement)
4. হাইড্রোট্যাকটিক চলন (Hydrotactic Movement)
1. ফটোট্যাকটিক চলন (Phototactic Movement):
উদ্ভিদদেহ যখন আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে স্থান পরিবর্তন করে, তখন তাকে ফটোট্যাকটিক চলন বা আলোক অভিমুখী চলন বলে।সহজ ভাবে, আলোক উদ্দীপকের প্রভাবে যে ট্যাকটিক চলন হয়, তাকে ফটোট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ: কয়েক প্রকার শৈবাল। যেমন: ক্ল্যামাইডোমোনাস, ভলভক্স প্রভৃতি
2. থার্মোট্যাকটিক চলন (Thermotactic Movement):
উদ্ভিদ দেহেরর চলন যখন উষ্ণতা উদ্দীপকের প্রভাবে হয়, তখন তাকে থার্মট্যাকটিক চলন বা উষ্ণতা-অভিমুখী চলন বলে।সহজ ভাবে, উষ্ণতা উদ্দীপকের প্রভাবে যে ট্যাকটিক চলন হয়, তাকে থার্মোট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ: পাতাশেওলা উদ্ভিদের চলন।
3. কেমোট্যাকটিক চলন (Chemotactic Movement):
উদ্ভিদ দেহাংশ যখন কোনো রাসায়নিক পদার্থের আকর্ষণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়, তখন তাকে কেমোট্যাকটিক চলন বা রাসায়নিক-অভিমুখী চলন বলে।সহজ ভাবে, রাসায়নিক উদ্দীপকের প্রভাবে যে ট্যাকটিক চলন হয়, তাকে কেমোট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ: ম্যালিক অ্যাসিডের আকর্ষণে ফার্ন গাছের শুক্রাণু ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হয়। বা গ্লুকোজের আকর্ষণে মসের শুক্রানুর চলন কেমোট্যাকটিক চলন
4. হাইড্রোট্যাকটিক চলন (Hydrotactic Movement):
উদ্ভিদ দেহেরর চলন যখন জলের প্রভাবে প্রভাবিত হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্যাকটিক চলন বা জলজ-অভিমুখী চলন বলে।সহজ ভাবে, জলজ উদ্দীপকের প্রভাবে যে ট্যাকটিক চলন হয়, তাকে হাইড্রোট্যাকটিক চলন বলে।
উদাহরণ: শৈবাল শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলের দিকের ধাবিত হয় - ইহা হাইড্রোট্যাকটিক চলনের উদাহরণ।
প্রশ্ন: ট্রপিক চলন বা দিগনির্ণীত চলন (Tropic Movement) কাকে বলে? ইহা কত প্রকার ও কি কি? প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দাও।
উত্তর: উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের উৎসের দিকে বা উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে হয়ে থাকে, তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিগনির্ণীত চলন (Tropic Movement) বলে।
ট্রপিক চলন প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
1. ফটোট্রপিক চলন (Phototropic Movement)
2. হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic Movement)
3. জিওট্রপিক চলন (Geotropic Movement)
ফটোট্রপিক চলন (Phototropic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে ফটোট্রপিক চলন বা আলোকবর্তী চলন বলে।সহজ ভাবে, আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে যে ট্রপিক চলন হয়, তাকে ফটোট্রপিক চলন বলে।
উদাহরণ: উদ্ভিদের কান্ড, শাখা, প্রশাখার বৃদ্ধি ফটোট্রপিক চলনের উদাহরণ।
2. হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন জলের উৎসের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বা জলবর্তী চলন বলে।সহজ ভাবে, জলের উৎসের গতিপথ অনুসারে যে ট্রপিক চলন হয়, তাকে হাইড্রোট্রপিক চলন বলে।
উদাহরণ: উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধি হাইড্রোট্রপিক চলনের উদাহরণ।
3. জিওট্রপিক চলন (Geotropic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে জিওট্রপিক চলন বা অভিকর্ষবর্তী চলন বলে।সহজ ভাবে, অভিকর্ষজ শক্তির গতিপথ অনুসারে যে ট্রপিক চলন হয়, তাকে জিওট্রপিক চলন বলে।
উদাহরণ: উদ্ভিদের মূল অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
প্রশ্ন: ন্যাস্টিক বা ব্যাপ্তি চলন (Nastic Movement) কাকে বলে ? ইহা কত প্রকার ও কি কি?প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দাও।
উত্তর: উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসারে না হয়ে উদ্দীপকের তীব্রতার উপর নির্ভর করে নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন (Nastic Movement) বলে।
ন্যাস্টিক চলন উদ্দীপকের প্রকৃতি অনুসারে চার প্রকার। যথা:
1. ফটোন্যাস্টিক চলন (Photonastic Movement)
2. থার্মোন্যাস্টিক চলন (Thermonastic Movement)
3. সিসমোন্যাস্টিক চলন (Seismonastic Movement)
4. কেমোন্যাস্টিক চলন (Chemonastic Movement)
1. ফটোন্যাস্টিক চলন (Photonastic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন আলোক তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে ফটোন্যাস্টিক চলন বা আলোক ব্যাপ্তি চলন বলে।সহজ ভাবে, আলোক তীব্রতা অনুসারে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে ফটোন্যাস্টিক চলন বলে।
উদাহরণ: পদ্ম, সূর্যমুখী প্রভৃতি ফুল তীব্র আলোতে ফোটে কিন্তু কম আলোতে মুদে যায়। আবার সন্ধ্যামালতী, জুই প্রভৃতি ফুল কম আলোতে ফোটে কিন্তু বেশি আলোতে মুদে যায়।
2. থার্মোন্যাস্টিক চলন (Thermonastic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উষ্ণতার তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বা তাপব্যাপ্তি চলন বলে।সহজ ভাবে, উষ্ণতার তীব্রতা অনুসারে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে থার্মোন্যাস্টিক চলন বলে।
উদাহরণ: টিউলিপ ফুলের পাপড়ি অধিক তাপে খোলে আবার কম তাপে মুদে যায়।
3. সিসমোন্যাস্টিক চলন (Seismonastic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন স্পর্শ, আঘাত, ঘর্ষণ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি উদ্দীপকের তীব্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে সিসমোন্যাস্টিক চলন বা স্পর্শব্যাপ্তি চলন বলে।সহজ ভাবে, স্পর্শ, আঘাত, ঘর্ষণ প্রভৃতির তীব্রতা অনুসারে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে সিসমোন্যাস্টিক চলন বলে।
উদাহরণ: লজ্জাবতী লতার পাতায় স্পর্শ করলে পাতাগুলি নুয়ে পড়ে। ইহা স্পর্শজনিত সিসমোন্যাস্টিক চলনের উদাহরণ।
4. কেমোন্যাস্টিক চলন (Chemonastic Movement):
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন কোনো রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন তাকে কেমোন্যাস্টিক চলন বা রসায়ন ব্যাপ্তি চলন বলে।সহজ ভাবে, রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে যে ন্যাস্টিক চলন হয়, তাকে কেমোন্যাস্টিক চলন বলে।
উদাহরণ: সূর্যশিশির(পতঙ্গভুক) উদ্ভিদের পাতার কর্ষিকা গুলি পতঙ্গের(প্রোটিন) সংস্পর্শে আসামাত্র বেঁকে গিয়ে পতঙ্গ কে আবদ্ধ করে। ইহা কেমোন্যাস্টিক চলনের উদাহরণ
3 মন্তব্যসমূহ
জিওটাপিক চলনের উদ্দীপক কী
উত্তরমুছুনঅভিকর্ষজ ত্বরণ
মুছুনমসের শুক্রানু সুক্রোজের প্রভাবে এবং ফার্নের শুক্রানু ম্যালিক অ্যাসিডের প্রভাবে ডিম্বাণুর দিকে অগ্রসর হয় , একে কেমোট্যাকটিক চলন বলে ।
উত্তরমুছুনYour comment will be visible after approval