সময় ও গতি - সপ্তম শ্রেণী - Time and Speed - Class VII

সময় ও গতি - সপ্তম শ্রেণী - Time and Speed - Class VII

সপ্তম শ্রেণী

Class VII

পরিবেশ ও বিজ্ঞান

Science

সময় ও গতি






স্থিতি ও গতি

প্রশ্ন: স্থিতি বলতে কি বোঝ?

উত্তর: পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে যে সব বস্তু সময়ের নিরিখে স্থান পরিবর্তন করকরেে না তাদের অবস্থানকে স্থিতি বলে।

উদাহরণ: গাছপালা, ঘরবাড়ি, কলকারখানা, রাস্তাঘাট প্রভৃতি।



প্রশ্ন: গতি বলতে কি বোঝ? বিভিন্ন গতির উদাহরণ দাও।

উত্তর: পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বস্তুর অবস্থানের সাপেক্ষে যে সব বস্তু সময়ের নিরিখে স্থান পরিবর্তন করে তাদের অবস্থানকে গতি বলে।

উদাহরণ: চলন্ত গাড়ি, ছুটন্ত ঘোড়া, মানুষের চলাফেরা প্রভৃতি গতির উদাহরণ।


বিভিন্ন ধরনের গতির উদাহরণ:

সরলরৈখিক গতি - রুলারের ধার বরাবর পেনসিল দিয়ে সোজা দাগ কাটার সময় পেনসিলের শিসের অগ্রভাগের গতি‌।


সরলরৈখিক গতি - সোজা রাস্তা বরাবর চলন্ত গাড়ির গতি ।


বৃত্তাকার পথে গতি - ঘড়ির কাঁটার অগ্রভাগের গতি ।


বৃত্তাকার পথে গতি - নাগরদোলার গতি


বক্রপথে গতি - ছাদ থেকে সামনের দিকে ছুড়ে দেওয়া পাথরের গতি‌।


বক্রপথে গতি - ঘড়ির পেন্ডুলামের গতি


ঘূর্ণন গতি - এক জায়গায় দাঁড়িয়ে পাক খেতে থাকা লাটুর গতি ।


ঘূর্ণন গতি - বৈদ্যুতিক পাখার গতি


ঘূর্ণন ও সরলরৈখিক গতির মিশ্রণ - সরলরেখা বরাবর চলন্ত সাইকেলের চাকার গতি ।


ঘূর্ণন ও সরলরৈখিক গতির মিশ্রণ - ক্রু ড্রাইভারের গতি


.....সূচীপত্র



দূরত্ব ও সরণ

দূরত্ব কাকে বলে?

উত্তর: কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে অন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে সরল‌ বা বক্রপথে যে পরিমাণ দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাকে ঐ বস্তু দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব বলে।


সরণ বলতে কি বোঝ?

উত্তর: কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে অন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে নির্দিষ্ট দিকে সরল‌রেখা বরাবর যে দৈর্ঘ্য অতিক্রম করে তাকে ঐ বস্তু সরণ বলে।


প্রশ্ন: দূরত্ব ও সরণের পার্থক্য লিখ

উত্তর: দূরত্ব ও সরণের পার্থক্য

দূরত্ব সরণ
1. সরল‌ বা বক্রপথে দুটি স্থানের মধ্যবর্তী মোট দৈর্ঘ্য কে দূরত্ব বলে। 1. একটি নির্দিষ্ট দিকে দুটি স্থানের মধ্যবর্তী সরলরৈখিক দৈর্ঘ্য কে সরণ বলে।
2. দূরত্বের শুরুমাত্র মান আছে কিন্তু দিক নেই তাই দূরত্ব স্কেলার রাশি। 2. সরণের মান ও দিক দুটোই আছে তাই সরণ ভেক্টর রাশি।
3. দূরত্বের মান সরণের মানের সমান অথবা বেশি হবে। 3. সরণের মান দূরত্বের মানের সমান অথবা কম হবে।
4. CGS ও SI পদ্ধতিতে তাপের একক যথাক্রমে ক্যালোরি ও জুল 4. CGS ও SI পদ্ধতিতে তাপমাত্রার একক যথাক্রমে সেলসিয়াস ও কেলভিন


.....সূচীপত্র



দ্রুতি ও বেগ

প্রশ্ন: দ্রুতি কাকে বলে? দ্রতির একক কি?

উত্তর: একক সময়ে কোন গতিশীল বস্তু যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ঐ বস্তুর দ্রুতি বলে

একক:

SI পদ্ধতিতে দ্রুতির একক মিটার/সেকেন্ড

CGS পদ্ধতিতে দ্রুতির একক সেন্টিমিটার/সেকেন্ড


প্রশ্ন: বেগ কাকে বলে? বেগের একক কি?

উত্তর: একক সময়ে কোন গতিশীল বস্তু একটি নির্দিষ্ট দিকে সরলরৈখিক ভাবে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে ঐ বস্তুর বেগ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, একক সময়ে কোন গতিশীল বস্তুর সরণের পরিবর্তনের হারকে ঐ বস্তুর বেগ বলে।

একক:

SI পদ্ধতিতে বেগের একক মিটার/সেকেন্ড

CGS পদ্ধতিতে বেগের একক সেন্টিমিটার/সেকেন্ড


.....সূচীপত্র



ত্বরণ ও মন্দন

প্রশ্ন: ত্বরণ কাকে বলে? ত্বরণের একক কি?

উত্তর: কোন গতিশীল বস্তুর ক্রমবর্ধমান বেগ বৃদ্ধির হার কে ত্বরণ বলে।

একক:

SI পদ্ধতিতে ত্বরণের একক মিটার/সেকেন্ড²

CGS পদ্ধতিতে ত্বরণের একক সেন্টিমিটার/সেকেন্ড²


প্রশ্ন: মন্দন বা ঋনাত্মক ত্বরণ কাকে বলে? মন্দনের একক কি?

উত্তর: কোন গতিশীল বস্তুর ক্রমহ্রাসমান বেগ পতনের হার কে মন্দন বলে।

একক:

SI পদ্ধতিতে মন্থনের একক মিটার/সেকেন্ড²

CGS পদ্ধতিতে মন্থনের একক সেন্টিমিটার/সেকেন্ড²


প্রশ্ন: ত্বরণের এককে সময়ের একক দুবার আসে কেন?

উত্তর: ত্বরণের সংজ্ঞা থেকে পাই, বেগ পরিবর্তনের হারকে ত্বরণ বলে। 

অর্থাৎ, ত্বরণ = বেগ/সময়।

                    = (সরণ/সময়)/সময়

                    = সরণ/সময়²

সুতরাং ত্বরণের একক = দৈর্ঘ্যের একক / সময়ের একক².

অর্থাৎ, ত্বরণের এককের সময়ের একক একবার আসে বেগের এককের জন্য আর একবার আসে বেগ পরিবর্তনের হারকে জন্য। তাই ত্বরণের এককে সময়ের একক দুবার আসে।


.....সূচীপত্র



নিউটনের প্রথম গতিসূত্র

নিউটনের প্রথম গতিসূত্র কি লিখ। নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে কি কি জানা যায়?

উত্তর: নিউটনের প্রথম গতিসূত্র: বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল দ্বারা বস্তুর অবস্থার পরিবর্তনে বাধ্য না করলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির এবং সচল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে।

নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে দুটি বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
১) বস্তুর জাড্য ধর্ম।
২) বলের সংজ্ঞা।


জাড্য বলতে কি বোঝ? জাড্য কত প্রকার কি কি? উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর:যে ধর্মের জন্য স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থা এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল তার গতীয় অবস্থা বজায় রাখতে চায় সেই ধর্ম কে জাড্য ধর্ম বলে।

জাড্য দুই প্রকার। যথা-
১) স্থিতি জাড্য।
২) গতি জাড্য।


স্থিতি জাড্য: স্থির বস্তুর চিরকাল স্থির অবস্থায় থাকার প্রবণতা কে স্থিতি জাড্য বলে।

স্থিতি জাড্যের উদাহরণ: স্থির গাড়ি হঠাৎ চলতে শুরু করলে গাড়ির মধ্যে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা পিছন দিকে হেলে পড়ে - ইহা স্থিতি জাড্যের উদাহরণ। যখন গাড়িটি স্থির ছিল তখন যাত্রীরাও গাড়ির মধ্যে স্থির অবস্থায় বসে বা দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ গাড়িটি চলতে শুরু করলে যাত্রীদের দেহের নিন্মাংশ গাড়ি সংলগ্ন বলে গাড়িটির সঙ্গে গতিশীল হয় কিন্তু দেহের উপরের অংশ স্থিতি জাড্যের প্রভাবে স্থির থাকতে চায় ফলে যাত্রীরা পিছন দিকে হেলে পড়ে।


গতি জাড্য: গতিশীল বস্তুর চিরকাল সমবেগে সরলরেখা বরাবর গতিশীল থাকার প্রবণতা কে গতি জাড্য বলে।

গতি জাড্যের উদাহরণ: চলন্ত গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষলে গাড়ির মধ্যে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে - ইহা গতি জাড্যের উদাহরণ। যখন গাড়িটি চলন্ত অবস্থায় ছিল তখন যাত্রীরাও গাড়ির মধ্যে চলন্ত অবস্থায় বসে বা দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ গাড়িটি ব্রেক কষে থেমে গেলে যাত্রীদের দেহের নিন্মাংশ গাড়ি সংলগ্ন বলে গাড়ির সাথে সাথেই স্থির হয়ে যায় কিন্তু দেহের উপরের অংশ গতি জাড্যের প্রভাবে তখনও তার গতীয় অবস্থা বজায় রাখতে চায় ফলে যাত্রীরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে।


নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে বলের সংজ্ঞা দাও বা বল কাকে বলে?

উত্তর: নিউটনের প্রথম গতিসূত্র অনুযায়ী বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে কোনো বস্তুর স্থির অবস্থা বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় তাকে বল বলা হয়।


.....সূচীপত্র



নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্রটি

নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্রটি লিখ।

উত্তর: কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুটির ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং প্রযুক্ত বল যে দিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবর্তনও সেদিকেই ঘটে।


.....সূচীপত্র



নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রটি

নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্রটি লিখ এবং উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে।

উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার সময় পেছন দিকে ঝটকা বা ধাক্কা অনুভব করে, ইহা নিউটনের তৃতীয় গতি সূত্রের উদাহরণ। বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ার সময় বন্দুক গুলির ওপর একটি বল প্রয়োগ করে যাকে বলা হয় ক্রিয়া। এই বলের ক্রিয়ায় গুলিটি সামনের দিকে প্রবল বেগে ছুটে যায় । একই সঙ্গে গুলিটিও বন্দুকের ওপর সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে । ফলে , বন্দুকটি পিছনের দিকে সরে যেতে চায় । তাই যে ব্যক্তি বন্দুক থেকে গুলি ছোড়ে সে একটি ঝটিকা বা ধাক্কা অনুভব করে ।


ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া কাকে বলে? উদাহরণ সহ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া: যখন কোন বস্তু অপর একটি বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করে , তখন দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর ওপর একটি সমান ও বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে । প্রথম বস্তুটি দ্বিতীয় বস্তুর ওপর যে বল প্রয়োগ করে , তাকে বলে ক্রিয়া (Action) এবং দ্বিতীয় বস্তুটি প্রথম বস্তুর দ্বারা যে বিপরীতমুখী বল অনুভব করে তাকে প্রতিক্রিয়া (Reaction) বলে।

ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ: কোনো একজন আরোহী নৌকো থেকে তীরে লাফ দিয়ে নামলে নৌকোটি পিছনের দিকে সরে যায়। নৌকো থেকে লাফ দেওয়ার সময় আরোহী নৌকোর ওপর একটি বল প্রয়োগ করে। এর ফলে নৌকোটি পিছনের দিকে সরে। সঙ্গে সঙ্গে নৌকোটি আরোহীকে একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে , যার ফলে আরোহী তীরে পৌঁছোয়। এক্ষেত্রে আরোহী দ্বারা নৌকার ওপর প্রযুক্ত বল হল ক্রিয়া এবং নৌকা দ্বারা আরোহীর ওপর প্রযুক্ত সমান ও বিপরীতমুখী বল হল প্রতিক্রিয়া।


.....সূচীপত্র



শক্তি

শক্তি বলতে কি বোঝ?

উত্তর: কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে।


.....সূচীপত্র



কার্য

কার্য কাকে বলে? কার্যের পরিমাপ কর।

উত্তর: কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ ঘটে তবে প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলা হয়।

কার্যের পরিমাণ: বস্তুর ওপর প্রযুক্ত বল এবং ওই বলের অভিমুখে বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণের গুণফলকে বলা হয় কার্যের পরিমাপ।

কার্য = বল × বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ



বলের দ্বারা কার্য, বলের বিরুদ্ধে কার্য এবং কার্যহীন বলের সংজ্ঞা সহ উদাহরণ দাও।

উত্তর: বলের দ্বারা কার্য: কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের অভিমুখে বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ ঘটে, তাহলে বলা হয়, প্রযুক্ত বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে ।

উদাহরণ: কোনো বস্তুকে কিছুটা ওপর থেকে ছেড়ে দিলে পথিবীর অভিকর্ষ বলের জন্য তা নীচের দিকে পড়ে । অভিকর্ষ বলের অভিমুখে বস্তুর সরণ ঘটল। তাই এক্ষেত্রে বলা যায় যে , অভিকর্ষ বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে।


বলের বিরুদ্ধে কার্য: কোনো বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে, যদি বলের প্রয়োগবিন্দুর সরণ বলের অভিমুখের বিপরীত দিকে ঘটে, তাহলে বলা যায়, প্রযুক্ত বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হয়েছে।

উদাহরণ: কোনো বস্তুকে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে তুললে প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের বিপরীত দিকে হয়। এক্ষেত্রে প্রযুক্ত বল অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করছে।


কার্যহীন বল: যদি কোনো বল কোনো বস্তুর গতির অভিমুখে সঙ্গে লম্বভাবে ক্রিয়া করে তাহলে বলটি কোনো কার্য করে না। তখন ঐ বলকে কার্যহীন বল বলে।

উদাহরণ: কোন ব্যক্তি হাতে সুটকেস নিয়ে সমতল রাস্তায় হাঁটতে থাকলে, অভিকর্ষজ বলের বিরুদ্ধে কোনো কার্য হয়না, কারণ এক্ষেত্রে সুটকেসের সরণ এবং অভিকর্ষজ বলের অভিমুখ পরস্পর লম্বভাবে ক্রিয়া করে।







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

Your comment will be visible after approval