Magnet
Class VII
চুম্বক
সপ্তম শ্রেণী
প্রশ্ন: চুম্বক বলতে কী বোঝোয়?
উত্তর: যে সব পদার্থ লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি ধাতুকে আকর্ষণ করে এবং যাদের দিকনির্দেশক ধর্ম আছে তাদের চুম্বক বলে।
প্রশ্ন: চুম্বকের ধর্ম গুলি কি কি?
উত্তর: চুম্বকের ধর্ম সাধারণত দুটি-
১. আকর্ষণী ধর্ম: চুম্বকের আকর্ষণ ধর্ম আছে বলে চুম্বক লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি ধাতুকে আকর্ষণ করতে পারে।
২. দিকনির্দেশক ধর্ম: কোন চুম্বকের মাঝখানে সুতো দিয়ে বেঁধে বাধাহীনভাবে ঝুলিয়ে দিলে চুম্বকটি উত্তর দক্ষিণ মুখ করে স্থির হয়ে যায়। চুম্বকের এই ধর্মকে দিকনির্দেশক ধর্ম বলে।
প্রশ্ন: চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ অন্য যে সব পদার্থকে আকর্ষণ করে তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি।
প্রশ্ন: অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ যে সব পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে না তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: কাঠ, কাগজ, প্লাস্টিক, কাচ প্রভৃতি।
প্রশ্ন: চুম্বক প্রধানত কত রকমের হয়ে থাকে?
উত্তর: চুম্বক প্রধানত দু রকমের হয়ে থাকে-
১. প্রাকৃতিক চুম্বক: প্রকৃতিতে যে সব চুম্বক পাওয়া যায় তাদের প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। এই ধরনের চুম্বক হল খনিজ চুম্বক। এই চুম্বক বাজারে সহজে কিনতে পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক চুম্বক নির্দিষ্ট আকারের হয় না এবং এই ধরনের চুম্বকের শক্তিও বেশী হয় না। ম্যাগনেসিয়া নামক অঞ্চলে এরকম প্রচুর পাথর পাওয়া যায়। এই ধরনের পাথরকে ম্যাগনেটাইট বলে।
২. কৃত্রিম চুম্বক: চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করলে তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। এই ধরনের চুম্বকের শক্তি বেশি হয় ও বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম চুম্বক এর ব্যাপক ব্যবহার আছে। আমাদের চারপাশে যে সব চুম্বক দেখতে পাই সে সবই কৃত্রিম চুম্বক। লোহা, নিকেল, কোবাল্ট এবং এদের সংকর ধাতুগুলিকে কৃত্রিম চুম্বকে পরিণত করা যায়। এগুলি হল কৃত্রিম চুম্বক।
প্রশ্ন: চুম্বকের মেরু কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বকের দুই প্রান্তে যে দুটি বিন্দুতে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সেই দুটি বিন্দুকে ঐ চুুুম্বকের মেরু বলে।
কোন চুম্বকের মেরু দুটি চুম্বকের একেবারে শেষ প্রান্তে থাকে না, চুম্বকের প্রান্ত দুটির কাছাকাছি কোন বিন্দুতে মেরু দুটি অবস্থান করে।
চুম্বকের দুটি মেরু - উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু।
প্রশ্ন: চৌম্বক দৈর্ঘ্য কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বকের মেরু দুটির মধ্যবর্তী রৈখিক দূরত্বকে ঐ চুম্বকের চৌম্বক দৈর্ঘ্য বলে। সাধারনত কোন চুম্বকের চৌম্বক দৈর্ঘ্য, চুম্বকের প্রকৃত দৈর্ঘ্যরের 86% (মতান্তরে 85%) হয়।
অর্থাৎ, চৌম্বক দৈর্ঘ্য = 0.86 × চুম্বকের প্রকৃত দৈর্ঘ্য
প্রশ্ন: চুম্বকের উদাসীন অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের মাঝামাঝি অঞ্চলে কোন চৌম্বক ধর্ম থাকে, অঞ্চলকে চুম্বকের উদাসীন অঞ্চল বলা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: চৌম্বক অক্ষ কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের মেরু দুটির সংযোগকারী কাল্পনিক সরলরেখাকে চৌম্বক কক্ষ বলা হয়।
প্রশ্ন: চৌম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের চারপাশে যে স্থান বা ক্ষেত্র জুড়ে ওই চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ধর্ম কাজ করে, সেই স্থান বা ক্ষেত্রটিকে ঐ চুম্বকের চৌম্বক ক্ষেত্র বলে।
প্রশ্ন: চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে - প্রমাণ করো।
উত্তর: দুটি দন্ড চুম্বকে বাধাহীনভাবে সুতোর সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলে চুম্বক-এর দিকদর্শী ধর্মের জন্য চুম্বক দুটি উত্তর দক্ষিণ দিক মুখ করে স্থির হয়ে যাবে। এর সাহায্যে আমরা চৌম্বক দুটির মেরু স্থির করতে পারব। উত্তর দিকের মেরু উত্তরমেরু এবং দক্ষিণ দিকের মুখ যুক্ত মেরু দক্ষিণমেরু।
এবার যদি একটি চুম্বকের উত্তর মেরু এবং অপর চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় তবে দেখা যাবে চুম্বক দুটি খুব সহজেই একে অপরকে আকর্ষণ করছে। আবার যদি একটি চুম্বকের উত্তর মেরু এবং অপর চুম্বকের উত্তর মেরুর কাছে নিয়ে আসা হয় তখন দেখা যাবে মেরু দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এর থেকে প্রমাণ হয় চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে।
চুম্বকের মেরু গুলোর অবস্থান পরিবর্তন করে যদি পরীক্ষাটি আবার করা হয় তবে একই ফল পাওয়া যাবে - এর থেকে প্রমাণিত হয় চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
প্রশ্ন : বিকর্ষণই চুম্বকের উৎকৃষ্ট প্রমাণ - ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোন একটি দন্ড চুম্বক কিনা তা বিকর্ষণ এর মাধ্যমে খুব সহজেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
দন্ডটিকে সুতোর সাহায্যে ঝুলিয়ে দিয়ে দন্ডটির কাছে আরেকটি চুম্বক দন্ড নিয়ে আসা হল। যদি দণ্ডটি চুম্বক টিকে আকর্ষণ করে তবে দুটো ঘটনা হতে পারে 1) দণ্ডটি একটি চৌম্বক পদার্থ যা চুম্বক টিকে আকর্ষণ করছে 2) আবার হতে পারে দন্ডটি একটি চুম্বক পদার্থ তাদের বিপরীত মেরু পরস্পরের কাছে এসেছে ফলে আকর্ষণ হচ্ছে। ফলে আকর্ষণ থেকে প্রমাণ হয়না দণ্ডটি চুম্বক না চৌম্বক পদার্থ।
আর যদি চুম্বক পদার্থটিকে দন্ডটির কাছে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডটি বিকর্শিত হয় তবে বুঝতে হবে অবশ্যই দণ্ডটি চুম্বক পদার্থ কেননা চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় বিকর্ষণই চুম্বকত্বের প্রকৃত প্রমাণ।
প্রশ্ন: চৌম্বক আবেশ বলতে কি বোঝ?
উত্তর: কোন চৌম্বক পদার্থকে একটি শক্তিশালী চুম্বকের সংস্পর্শে বা কাছে আনলে সাময়িক ভাবে চৌম্বক পদার্থটি চুম্বকে পরিণত হয়ে পড়ে। চৌম্বক পদার্থের এই রকম সাময়িক চুম্বকে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে চৌম্বক আবেেশ বলে। মূল চুম্বক পদার্থটিকে থেকে সরিয়ে নিলে চৌম্বক পদার্থের চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
প্রশ্ন: ' আকর্ষণের পূর্বে আবেশ হয়'- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ যখন কোন চৌম্বক পদার্থ কে আকর্ষণ করে, তখন তার আগে ওই চৌম্বক পদার্থটিকে আবেশিত করে সাময়িকভাবে তাকে চুম্বক-এ পরিণত করে, এবং পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই বলা যায় 'আকর্ষণের পূর্বে আবেশ হয়'।
প্রশ্ন: একক মেরু বিশিষ্ট চুম্বক পাওয়া সম্ভব কি?- বুঝিয়ে বল।
উত্তর: একটি চুম্বককে ভেঙ্গে দু'টুকরো করলে প্রতিটি টুকরোই দুই মেরু বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ চুম্বকের মত আচরণ করে। টুকরো দুটিকে আরো ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত করলেও দেখা যাবে প্রতিটি অংশই এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চুম্বকের মত আচরণ করছে এর থেকে বলা যায় - একক মেরু বিশিষ্ট চুম্বক পাওয়া সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: 'পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক'- উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: একটি লোহার দন্ডকে বহুদিন ধরে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর রেখে দিলে যাবে ওই লোহার দন্ডটির মধ্যে খুব অল্প পরিমাণের চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এবং দন্ডটির উত্তর দিক চুম্বকের উত্তর মেরুর মত ও দক্ষিণ দিক চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর মত আচরণ করছে।
লোহা একটি চৌম্বক পদার্থ ও পৃথিবীর চুম্বকত্বে আবিষ্ট হয়ে লোহা চুম্বকের মতো আচরণ করেছে। এই ঘটনাটি থেকে প্রমাণিত হয় 'পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক'।
প্রশ্ন: তড়িৎ চুম্বক কাকে বলে?
উত্তর: একটি কাঁচা লোহার দন্ডের ওপর অন্তরিত তামার তার কুন্ডলীর মত করে জড়িয়ে ঐ তারের মধ্য দিয়ে সমপ্রবাহী তড়িৎ প্রবাহিত করলে লোহার দন্ডটি সাময়িকভাবে চুম্বকে পরিণত হয়। এবং তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করলে চুম্বকটির চুম্বকত্ব লোপ পেয়ে যায়। এই ধরনের চুম্বকে তড়িৎ চুম্বক বলে।
প্রশ্ন: চুম্বকের ব্যবহার লিখ।
উত্তর: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চুম্বকের বহুল ব্যবহার রয়েছে। যেমন-
১) সমুদ্রে দিকনির্দেশক যন্ত্র হিসেবে নাবিকরা 'নৌকম্পাস' ব্যবহার করে। একটা সূচাগ্র ধাতব দন্ডের উপর একটি চুম্বক শলাকা বসিয়ে নৌকম্পাস তৈরি করা হয়।
২) লাউড স্পিকারে চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
৩) ফ্রিজের দরজায় চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
৪) ATM(Automated Teller Machine) ও ক্রেডিট কার্ডে চুম্বকিত স্ট্রিপ ব্যবহার করা হয়।
৫) কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে প্লাস্টিকের চাকতির উপর চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে।
৬) ইলেকট্রিক কলিংবেলে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
৭) চোখের ভেতর থেকে লোহার চূর্ণ বের করার জন্য ডাক্তাররা এক ধরনের বিশেষ তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করেন।
৮) বিভিন্ন রকম মোটরে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: চুম্বকের চুম্বকত্ব কি কি কারনে নষ্ট হতে পারে।
উত্তর: বিভিন্ন কারণে চুম্বকের চুম্বকত্ব হ্রাস পেতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। যেমন-
১) কোন চুম্বকের ওপর থেকে ফেলে দিলে বা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে চুমুকের চুম্বকত্ব হ্রাস পায়।
২) চুম্বক কে উত্তপ্ত করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব হ্রাস পায় আবার ঠান্ডা করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু একটি বিশেষ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়।
যে তাপমাত্রায় কোন চুম্বকের চুম্বকত্ব চিরতরে নষ্ট হয়, সেই তাপমাত্রাকে ওই চুম্বকের উপাদানের কুরি বিন্দু বলা হয়। তখন চৌম্বক পদার্থটি অচৌম্বক পদার্থে পরিণত হয়। কুরি বিন্দু মান বিভিন্ন চৌম্বক পদার্থের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন লোহা বা ইস্পাতের ক্ষেত্রে কুরি বিন্দু 750°C, নিকেল এর ক্ষেত্রে কুরি বিন্দু প্রায় 360°C।
৩) কোন চুম্বকের গায়ে অন্তরিত তামার তার জড়িয়ে তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে চুম্বকের চুম্বকত্ব নষ্ট হয়।
৪) দুটি চুম্বকের সমমেরু কাছাকাছি থাকলে চুম্বক গুলির চুম্বকত্ব হ্রাস পেতে থাকে।
9 মন্তব্যসমূহ
Thanks you very much everyone......❤
উত্তরমুছুনতড়িৎ chumbokar akorson komota kon kon upaye barno jar
উত্তরমুছুনমরুহীন চুম্বক এর উদাহরণ কি
উত্তরমুছুনচুম্বকের ইংরেজি নাম ম্যাকনেট হওয়ার কারণ কী?
মুছুনকোন দন্ড চুম্বকের যদি ছোট ছোট কণা ভাঙা যায তাহলে তার কি চুম্বকত্ব থাকবে
উত্তরমুছুনVery well 😘
উত্তরমুছুনHmm
মুছুন১)একটি তড়িৎ চম্বুকের শক্তি কী কী উপায়ে বৃদ্ধি করা যায়?
উত্তরমুছুন২)তড়িৎ চুম্বকের শক্তি বৃদ্ধি একটি পরীক্ষা করো চিত্রসহ।
কুড়ি বিন্দু কাকে বলে
উত্তরমুছুনYour comment will be visible after approval